এই কবিতাটা মায়ের স্মৃতি, ভালোবাসা আর না-পাওয়ার বেদনা নিয়ে লেখা। সময় পেরিয়ে গেলেও মায়ের যত্ন, স্নেহ আর ত্যাগ আজও মনে দাগ কেটে আছে।
তোমাকে কতদিন দেখিনি,
কতকাল, কত বছর পেরিয়ে গেছে অগোচরে।
প্রবাসের দূরত্বে থেকেও
প্রতিদিন মোবাইলে একটুখানি কথা না হলে
তুমি ঘুমোতে পারতে না,
আমিও পারতাম না।
এখনো মনে পড়ে—
আমার আর ছোট চাচার গেঞ্জি ছিল প্রায় একই রকম,
রোদ্দুরে শুকোতে দিলে মিলিয়ে যেত দুটোই।
তখন মা নাকের সুরে ঘ্রাণ নিয়ে
আমার গেঞ্জিটা আলাদা করে আনতেন।
চাচীরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করত—
“কিভাবে বুঝলেন এটা মামুনের গেঞ্জি?”
মা হেসে বলতেন,
“আমার ছেলের শরীরের ঘ্রাণেই আমি চিনতে পারি।”
রাতে যখন পড়তে বসতাম,
তুমি পাশে বিছানায় শুয়ে থাকতে
আমি টেবিলে পড়তাম,
আর তুমি পাহারার মতো চোখে চোখে রাখতাম আমাকে।
সেই দিনগুলো আজও বুকের ভেতর কাঁপন তোলে।
বড় মাছের পিসটা তুমি সবসময় আমার জন্য রেখে দিতে।
তখন বুঝতাম না,
তুমি খেয়েছো কি খাওনি,
আজ বুঝি—
তুমি হয়তো খাওনাই,
শুধু আমার জন্যই বড় মাছটা রেখে দিতে।
শিশুকালে আমি মাছ খেতাম কম, কাটার ভয়ে।
তুমি হাত দিয়ে একেকটা মাছ খুঁটে খুঁটে
সব কাঁটা বের করে
পরিষ্কার করে সাজিয়ে দিতে আমার প্লেটে।
তোমার সেই ভালোবাসা আজও মুখে লেগে আছে, মা।
কিন্তু তুমি চলে গেছো বহুদূরে,
আর দেখা হবে না কোনোদিন দুনিয়াতে ।
তবুও দোয়া করি—
আল্লাহ যেন পরকালে আমাদের বারবার মিলিয়ে দেন।
তোমাকে কতদিন দেখিনি,
আজ মনে হয় শত বছর কেটে গেছে।
তবুও এই দোয়া আমার হৃদয়ে অটুট—
আল্লাহ তোমাকে জান্নাত নসিব করুন,
শান্তি ও সুখের ঠিকানায় রাখুন।
رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًۭا
(হে আল্লাহ, তাদের প্রতি রহম করুন,
যেমন তারা শৈশবে আমাকে লালন করেছেন)।