Use code AMH2025 on Noon or Namshi for 10 SAR cashback. Copy Code

Cashback: 10 SAR. T&Cs apply. Offer All time

ইসলামের দৃষ্টিতে রাগ বা ক্রোধ আমল নষ্ট করে ।

ভূমিকা

মানবচরিত্রের অন্যতম দুর্বলতা হলো ক্রোধ। নিয়ন্ত্রণহীন রাগ মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। ক্রোধান্বিত মানুষ বেসামাল হয়ে যায়, অন্যের ওপর জুলুম করে, এমনকি খুনখারাবি পর্যন্ত ঘটায়। সংসার ভেঙে যায়, সমাজে অশান্তি দেখা দেয়। ইসলাম ক্রোধ নিয়ন্ত্রণকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং এটিকে ঈমানের পরিপূর্ণতার অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

  • ক্রোধান্বিত মানুষ বেসামাল হয়ে অন্যের ওপর জুলুম করে।
  • প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে, খুনখারাবি পর্যন্ত ঘটায়, সংসার ভেঙে দেয়।
  • গিবত ও সমালোচনার পেছনেও রাগ কাজ করে।
  • শয়তান মানুষের অন্তরে ক্রোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়, কারণ ক্রোধ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।

তাই ক্রোধ নিবারণ অপরিহার্য, নচেৎ জীবনে বিপর্যয় অনিবার্য।


ইসলামের দৃষ্টিতে রাগ বা ক্রোধ আমল নষ্ট করে

রাসূল ﷺ এর নসিহত

এক সাহাবি রাসূল ﷺ–এর কাছে এসে বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে অল্প কথায় কিছু নসিহত করুন।”
প্রতিবারই তিনি এক কথাই বললেন: “ক্রোধ বর্জন করো।” (বুখারি)

এটি প্রমাণ করে, ইসলামে রাগ নিয়ন্ত্রণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রোধে বিচার অন্যায় হয়

সাহাবি আবু বকর রা.- এর ছেলে, যিনি সিজিস্তানের কাজী ছিলেন, তিনি পিতার কাছ থেকে নসিহত পান -
“কখনো ক্রোধ অবস্থায় রায় দেবে না।”
কারণ রাগের সময় বিচার ইনসাফভিত্তিক হয় না।

রাসূল ﷺ বলেন:
“প্রকৃত বাহাদুর সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।” (মুসলিম)

কুরআনের শিক্ষা

আল্লাহ বলেন:
“যারা নিজেদের ক্রোধ হজম করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।”
(সূরা আলে ইমরান: ১৩৪)

সাহাবি ও ইমামদের দৃষ্টান্ত

হজরত হুসাইন রা.

অজুর সময় তাঁর দাসী পানি ঢালতে গিয়ে ভুলক্রমে তাঁর পায়ে ফেলে দেয়। এতে কাপড় ভিজে যায় এবং ব্যথা পান। স্বাভাবিকভাবে রাগ হওয়া উচিত ছিল। তখন দাসী আয়াতের অংশ পড়ে শোনায়: “ওয়াল কাজেমিনাল গাইযা” (যারা ক্রোধ দমন করে)।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাগ দমন করেন। দাসী পরের অংশ পড়ে: “ওয়াল আফিনা আনিন নাস” (মানুষকে ক্ষমা করে), তিনি বলেন, “আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম।”
শেষ অংশ শোনালে তিনি দাসীকে মুক্ত করে দেন।

ইমাম আবু হানিফা রা.

এক ব্যক্তি তাঁকে গালি দিল। তিনি কিছু না বলে ফিরে গিয়ে একটি খাঞ্চায় সোনা-রূপা ভরে ঐ ব্যক্তিকে উপহার দেন। বললেন, “আজ তুমি তোমার সওয়াব আমাকে দান করলে, এর প্রতিদানস্বরূপ এটি গ্রহণ করো।”
লোকটি লজ্জিত হয়ে তাওবা করে ইমামের শিষ্য হয়ে গেল।

রাগ দমনকারীর মর্যাদা

রাসূল ﷺ বলেন:

  • “কিয়ামতের দিন ঘোষণা করা হবে: যারা দুনিয়াতে অন্যকে ক্ষমা করেছে তারা দাঁড়াক।”
  • “যে ব্যক্তি রাগ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা দমন করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে হুর বেছে নেওয়ার অধিকার দেবেন।” (আবু দাউদ)
  • “আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ক্রোধ দমন করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।”

নবীদের শিক্ষা

সব নবীই ছাগল চরিয়েছেন। কারণ ছাগলের বিপরীতমুখী স্বভাব থেকে ধৈর্য ও রাগ দমন শেখা যায়।
হজরত মুসা আ. একবার পালিয়ে যাওয়া ছাগল ধরতে গিয়ে পেটাতে চাইলেন। কিন্তু ছাগলটি কাঁপতে দেখে দয়া হলো, তিনি পেটালেন না বরং কোলে তুলে আনলেন।
আল্লাহ তখন বললেন, “যেদিন তুমি রাগকে দয়ায় পরিণত করলে, সেদিনই তোমাকে নবী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

১. দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়া, বসা অবস্থায় শুয়ে পড়া। (তিরমিজি)
২. ঠান্ডা পানি পান করা বা অজু করা। (আবু দাউদ)
৩. “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম” পড়া। (সূরা হা-মিম সাজদা: ৩৬)
৪. মনে করা—আল্লাহ যদি আমার ওপর রাগ করেন, আমি টিকতে পারব না। তাই আমিও মানুষকে ক্ষমা করব।

নিয়ন্ত্রিত রাগের অনুমতি

ব্যক্তিগত আক্রোশে রাগ করা হারাম। তবে দ্বীনের স্বার্থে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে শাসনের জন্য সীমিত রাগ বৈধ। যেমন—

  • সন্তান ও ছাত্রকে শাসন,
  • অফিস-আদালতের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা।

রাসূল ﷺ বলেন:
“যাকে ভালোবাসব আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসব, যার প্রতি রাগ করব তাও আল্লাহর উদ্দেশ্যে।” (তিরমিজি)

উপসংহার

ক্রোধ বর্জন কেবল নৈতিকতা নয়, বরং ঈমানের পূর্ণতা।

  • রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে দুনিয়ায় শান্তি আসে।
  • অন্যকে ক্ষমা করলে আল্লাহও ক্ষমা করেন।
  • যে রাগ দমন করতে পারে, সেই প্রকৃত বাহাদুর এবং আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে।

 তাই বলা যায়: ক্রোধ সংযম করাই হলো জান্নাতের পথ, আর ক্ষমাশীলতাই মুমিনের আসল গুণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Ads DIVI

Ads Hostinger

🎉 Get 20% OFF + Fast & Secure Hosting with Hostinger Claim Your 20% Discount