অনেকেই বলে থাকেন—“মৃত্যুর পরে ভাই–বোনের সাথে আর দেখা হবে না” কিংবা “ভাই–বোন কথা বললে সময় থেমে যায়”। কিন্তু ইসলামের সহিহ সূত্র অনুযায়ী বিষয়টি আসলে কী? আসুন পরিষ্কারভাবে দেখি।
আখিরাতে আত্মীয়তার অবস্থা
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন—
“যেদিন মানুষ তার ভাই, তার মা, তার বাবা, তার স্ত্রী এবং তার সন্তানদের থেকে পলায়ন করবে।”
(সূরা আবাসা 80:34–36)
অন্য আয়াতে এসেছে—
“সেদিন কোনো বন্ধু বন্ধুর উপকারে আসবে না, আর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।”
(সূরা আদ-দুখান 44:41)
👉 এর মানে হলো: কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারবে না। আত্মীয়তা, ভাই–বোন, সন্তান—কেউই কারও কাজে আসবে না। প্রত্যেকে নিজ নিজ হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
তাহলে কি ভাই–বোনের সাথে আর দেখা হবে না?
না। যদি সবাই ঈমানদার হয় এবং আল্লাহর রহমতে জান্নাত লাভ করে, তবে জান্নাতে আল্লাহ তাদের মিলিয়ে দেবেন।
কুরআনে বলা হয়েছে:
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরা ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তানদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেব।”
(সূরা তূর 52:21)
✅ তাই, জান্নাতে মুমিন ভাই–বোন, পরিবার-পরিজনরা মিলিত হবে এবং পরম শান্তিতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
“ভাই–বোন কথা বললে সময় থেমে যায়”—এর সত্যতা কী?
- ইসলামে এ রকম কোনো সহিহ হাদিস নেই।
- এটি লোকমুখে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা বা কুসংস্কার।
- কুরআন-হাদিসে কোথাও নেই যে ভাই–বোন কথা বললে সময় থেমে যায়।
সারকথা
- মৃত্যুর পরে ভাই–বোনের সাথে দেখা হবে না—এমন সরাসরি সহিহ হাদিস নেই।
- কেয়ামতের দিনে মানুষ একে অপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, কারণ সেদিন সবাই নিজের হিসাব নিয়ে চিন্তিত থাকবে।
- তবে জান্নাতে ঈমানদার ভাই–বোন আবার মিলিত হবে।
- “ভাই–বোন কথা বললে সময় থেমে যায়”—এটা ইসলামী শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং কুসংস্কার।
🌸 পাঠকদের জন্য নসিহত
আমাদের উচিত, ভিত্তিহীন কথা না ছড়িয়ে কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে সঠিক জ্ঞান গ্রহণ করা। আর দুনিয়ায় ভাই–বোনের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা, তাদের হক আদায় করা—এটাই হবে জান্নাতে মিলিত হওয়ার একমাত্র উপায়।