সাঈয়িদ কুতুবের শেষ কথাগুলো: কালেমা যার জন্য ফাঁসি, আবার কারো রুটি!

🔹 ভূমিকা

ইসলামের ইতিহাসে কিছু শহীদ এমন আছেন, যাঁদের জীবন এবং মৃত্যু উম্মাহকে চিরকাল অনুপ্রাণিত করে। তাঁদেরই একজন হলেন সাঈয়িদ কুতুব (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি কেবল একজন লেখক নন, ছিলেন এক মহান চিন্তাবিদ, দাঈ, এবং সত্য ও তাওহীদের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তাঁর ফাঁসির আগমুহূর্তের একটি ঘটনা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

সাঈয়িদ কুতুবের শেষ কথাগুলো কালেমা যার জন্য ফাঁসি, আবার কারো রুটি


🕋 ঘটনার পটভূমি

১৯৬৬ সালের ২৯ আগস্ট, মিসরের জাহেলিয়াতের শাসকগোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করে। কিন্তু এর আগেই তাঁকে জেলের ইমাম পাঠানো হয় "কালিমা" পড়ানোর জন্য। কারণ সরকারি নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে আসামিকে কালেমা পড়ানো হয়।


🗣️ শেষ মুহূর্তের কথোপকথন

জেলের ইমাম এসে বললেন:
“আমি আপনাকে কালিমা পড়াতে এসেছি। এটি আমার দায়িত্ব।”

সাঈয়িদ কুতুব জিজ্ঞেস করলেন:
— “এই দায়িত্ব কে দিয়েছে?”
ইমাম: “সরকার।”

সাঈয়িদ কুতুব আবার প্রশ্ন করলেন:
— “এর বিনিময়ে আপনি কি বেতন পান?”
ইমাম: “হ্যাঁ, আমি সরকার থেকে বেতন পাই।”

এবার সাঈয়িদ কুতুব যে কথাটি বললেন, তা আজও প্রতিধ্বনিত হয় মুসলিমদের হৃদয়ে:

❝ কি আশ্চর্য!
তুমি যে কালিমা পড়াও, তা তোমার রুটি জোগায় —
আর আমি সেই কালিমার অর্থ ব্যাখ্যা করায় ফাঁসিতে ঝুলি! ❞


📚 ঘটনার গুরুত্ব ও শিক্ষা

এই একটি বাক্য মুসলিম সমাজের দ্বিমুখী চরিত্রের চরম বাস্তবতা তুলে ধরে:

  • একপক্ষ ইসলামকে ব্যবহার করে চাকরি ও সুবিধা অর্জনের জন্য,
  • অন্যপক্ষ ইসলামকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করে জীবন বিলিয়ে দেয়।

সাঈয়িদ কুতুবের লেখনী বারবার তাওহীদের শুদ্ধ ব্যাখ্যা, পশ্চিমা বস্তুবাদ ও মুনাফিক শাসনব্যবস্থার মুখোশ উন্মোচন করেছে। তাঁর অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ “মা'আলিম ফিত্ ত্বারিক” (পথচিহ্ন) আজও তরুণদের জাগ্রত করে।


⚖️ তাঁর শহাদতের প্রভাব

তাঁর ফাঁসি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হলেও, ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে এটি একটি চেতনার আগুন হয়ে জ্বলছে। অসংখ্য যুবক তাঁর চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে দাওয়াহ, শিক্ষা, এবং ইসলামী রেনেসাঁয় এগিয়ে এসেছে।


🌿 উপসংহার

সত্যের পথে হাঁটতে গেলে কখনো কখনো নিজের জীবনও উৎসর্গ করতে হয়।
সাঈয়িদ কুতুব (রাহ.) ছিলেন সেই সত্যযাত্রার প্রতীক, যিনি দুনিয়ার চাকচিক্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।


🕊️ দোয়া

اللهم ارحمه و اجعل قبره روضة من رياض الجنة
হে আল্লাহ, আপনি তাঁকে ক্ষমা করুন, ও তাঁর কবরকে জান্নাতের একটি বাগান বানিয়ে দিন। আমীন।

Post a Comment

Previous Post Next Post