বাংলাদেশসহ অনেক দেশে আগে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, এমনকি সাধারণ পোস্টার ব্যানারে, লোগোতে আরবি লেখা ও আল্লাহর নাম ব্যবহৃত হত। বাইরে থেকে এটা ইসলামি রঙ-ঢঙ মনে হলেও বাস্তবে এর মাধ্যমে অনেক সময় পবিত্র নামগুলো অবমাননার শিকার হতো।
কেন সমস্যার সৃষ্টি হতো
১. অসন্মান হওয়ার ঝুঁকি
- পোস্টার বা ব্যানার অনেক সময় রাস্তায় পড়ে যেত বা পায়ের নিচে চলে যেত।
- মুদ্রিত কাগজগুলো আবর্জনায় মিশে গেলে আল্লাহর নাম বা কুরআনের আয়াত অবমাননার শামিল হতো।
২. শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে নিষেধাজ্ঞা
- ইসলামে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত বা পবিত্র আরবি লেখা এমন স্থানে রাখা উচিত নয় যেখানে সেগুলো অপমানিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আলেমরা তাই পরামর্শ দেন এগুলো সরাসরি পোস্টার ব্যানার বা লোগোতে ব্যবহার না করার জন্য।
৩. ব্যবহারিক সমাধান
- যাতে অবমাননা না হয়, সেজন্য লোগো বা পোস্টার থেকে সরাসরি আরবি আয়াত বা আল্লাহর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
- পরিবর্তে ইসলামী প্রতীক যেমন চাঁদ, তারা, কলম, কুরান মসজিদের আকৃতি বা সবুজ রঙ ব্যবহার শুরু হয়েছে।
এখন অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান তাদের লোগোতে ইসলামের প্রতীকী চিহ্ন ব্যবহার করে, কিন্তু সরাসরি কুরআনের আয়াত বা “আল্লাহ” শব্দটি এড়িয়ে চলে। এটি আসলে সম্মানের জায়গা থেকেই করা হয়, যাতে পবিত্র শব্দগুলো অপমানিত না হয়।
কুরআনের নির্দেশনা
সূরা হজ্জ (২২:৩২):"যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই তা হৃদয়ের তাকওয়ার প্রকাশ।"
- এখানে আল্লাহর নিদর্শন (আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, ধর্মীয় প্রতীক ইত্যাদি) সম্মান করার নির্দেশনা রয়েছে। যেগুলোকে সম্মান করা মানে এগুলোকে অবমাননা থেকে বাঁচানো।
সূরা আনআম (৬:১০৮):"তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, যাদেরকে তারা আল্লাহ ছাড়া ডাকে; এতে তারা অজ্ঞতার কারণে সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহকেই গালি দিতে পারে।"
- শিক্ষা হলো, আল্লাহ বা তাঁর সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে এমন কিছু করা যাবে না যা অবমাননার দিকে নিয়ে যায়।
হাদীসের দলিল
১. আল্লাহর নামকে সম্মান করা
রাসূল ﷺ বলেছেন: "আল্লাহর নামকে সম্মান করো।"(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২১৭৮৭)
- অর্থাৎ, আল্লাহর নাম এমন স্থানে রাখা যাবে না যেখানে তা অপমানিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. কুরআনের আয়াত অবমাননা নিষিদ্ধ
হযরত উমর (রা.)-এর সময় দেখা গিয়েছিল কিছু মানুষ চিঠি বা কাগজে কুরআনের আয়াত লিখে ফেলে দিত। তখন তিনি নিষেধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন এগুলো যেন আবর্জনার মতো ব্যবহার না হয়।(ইবনে আবি শাইবা, আল-মুসান্নাফ ৬/১২৬)
৩. পবিত্র জিনিসকে অশুদ্ধ জায়গা থেকে দূরে রাখা
নবী ﷺ টয়লেটে প্রবেশের সময় আংটি খুলে ফেলতেন, কারণ সেই আংটিতে "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" লেখা ছিল। (আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯)
- এ থেকে প্রমাণ হয়, পবিত্র লেখা এমন জায়গায় রাখা যাবে না যেখানে তা অসম্মানিত হতে পারে।
শরীয়তের আদব না জানলে বা ইসলামি জ্ঞান কম থাকলে এধরনের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। লোগো বা প্রতীকে আরবি বাদ দেওয়া মানে ইসলাম থেকে দূরে যাওয়া নয়; বরং ইসলামি আদব মানার জন্যই এই পরিবর্তন করা হয়েছে।
তাই আজকের দিনে প্রতীকী ইসলামী চিহ্ন ব্যবহার করা উত্তম এবং শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ইসলামের অপমান নয়, বরং ইসলামের প্রতি সম্মানের প্রকাশ।