দীর্ঘস্থায়ী বিজয় অর্জনে ইসলামপন্থীদের করণীয়

 (ক)ইসলামী প্রাণশক্তিই মূল; রাজনীতিকে এর অংশমাত্র মনে করা:

  1.  কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখার প্রেরণা থাকতে হবে: (অ)পার্থিব সুবিধা আসলো নাকি গেলো সেটার পরোয়া করা যাবে না। (আ)স্বার্থ হারানোর আশংকায় কোনো দায়িত্ব বর্জন করা যাবে না।
  2.  অন্ধ আনুগত্য দাবি করা যাবে না: (অ)অন্ধ আনুগত্য চর্চা করা বন্ধ করতে হবে। (আ)নেতার কথাকে কুরআন-হাদীসের মতো অখণ্ড পর্যায়ের মর্যাদা দেওয়া যাবে না।
  3. কুরআন (তাফসীরসহ) নিয়মিতভাবে অধ্যয়নের দ্বারা সবসময় ঈমানকে তরতাজা রাখতে হবে: (অ)কুরআন প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সক্রিয় থাকা প্রয়োজন।
  4. দলের অভ্যন্তরে ‘রাজনীতি’ বর্জন করতে হবে: (অ)ব্যাক্তিস্বার্থে বাছাই বা ছাটাই করা যাবে না।

(খ) মেধাবী, জ্ঞানী ও প্রতিভাবানদের অগ্রাধিকার দেওয়া:

দীর্ঘস্থায়ী বিজয় অর্জনে ইসলামপন্থীদের করণীয়

১.সংগঠনে যোগ্য ও মেধাবীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে: (অ)সবচেয়ে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে নিতে হবে। (প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদাসম্পন্ন বিষয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী ও অন্য বিষয়ের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান..) (আ)জনশক্তিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তি করানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে ঐ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসতে পারে যেখানে শিক্ষকদের প্রায় ৭০% ডক্টরেট ডিগ্রীধারী, যেখানে উন্নত ল্যবরেটরী বিদ্যমান, যেখান থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বেশি, বিসিএসে চান্সপ্রাপ্তির হার বেশি, সরকারী ও বেসরকারী চাকরীর সুযোগ বেশি, বিভিন্ন বিশ্বদ্যিালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর সরবরাহ করা হয় বেশি, বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ বেশি..।

২.গুণী তৈরির লক্ষ্যে গুণীকে কদর করতে হবে: (অ)গুণীর আন্তরিক পরামর্শকে ‘নাক গলানো’ ধরণের উপদেশ মনে করা ঠিক নয়। এতে আন্তরিকতা ও উপদেশ দু’টোই হারাতে হয়।

৩.ভাষাজ্ঞান, আবৃত্তি (তিলাওয়াত), সঙ্গীত, খেলাধুলা (শরীরচর্চা) ইত্যাদিসহ সকল বিষয়ে বিশেষভাবে পারদর্শীদেরকে মূল্যায়ন করে তাদের প্রতিভা বিকাশের পথ খুলে দেওয়া কর্তব্য।

৪.বৈশ্বিক, রাষ্ট্রীয় ও দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রজ্ঞাবান, মেধাবী, সূক্ষ্ম বুদ্ধির অধিকারী ও সাধারণ জ্ঞানে পারদর্শীদেরকে শীর্ষে রাখা প্রয়োজন (অর্থাৎ, ‘ছাগল দিয়ে হালচাষ’ বর্জনীয়)।

৫.কেন্দ্রীয় কমিটিতে শীর্ষ আলিম, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদ সহ উচ্চমানের লোকদের বেশি পরিমাণে আনার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।

(গ) নিজেদের ভুল ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করা:

১.ঠকে নয় বরং না শিখে দূরদর্শিতা অর্জন করতে হবে।

২.ব্যর্থতাকে ঈমানের পরীক্ষা আখ্যা দিয়ে আত্মতৃপ্তিতে থাকা যাবে না।

৩.অতীত কর্মকৌশলের সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে- কোথায় কোথায় কি কি সমস্যা ছিলো। (অ)জাতীয়ভাবে ‘বিতর্কিত’ ইস্যুর সাথে দূরতম সম্পর্ক থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে হয়- অভিভাবকের আসনে রাখা যেতে পারে (প্রতিপক্ষ যাদেরকে কর্তৃত্বহীন মনে করবে) অথবা তাদেরকে অন্য প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের বাইরে রাখা যেতে পারে।

৪.উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিরপেক্ষ হতে হবে; একপেশে হওয়া যাবে না। কেবল শাখা নেতার অভিযোগে বিনা যাচাইয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া বা তার ছাত্রজীবন শেষ করিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার পর যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

(ঘ) সকল পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা:

১.অনুসারীরা তো বটেই এমনকি নেতা পর্যায়ের লোকেরাও যেনো সাধারণ একজন ব্যক্তির কাছেও জবাবদিহিতা করতে বাধ্য হয় এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

২.অভিযোগ যিনিই উত্থাপন করুন- তা অবশ্যই যাচাই করতে হবে। এক পক্ষের কথা শুনে অন্ধ বিচার করা যাবে না।

(ঙ) কর্মবন্টন নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন:

১.যার জন্য যে কাজ উপযোগী তাকে সে ধরনের কাজ দেওয়াই যুক্তিযুক্ত: (অ)ইসলামের পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা ঝটিকা মিছিলে না এসেও ইসলামের বেশি উপকার করতে পারেন।

২.আমূল পরিবর্তন (বা বিপ্লব) এতো সহজ কাজ নয় যে, দুই একটা মিছিল করে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করলেই তা সফল হয়ে যায়। (অ)দুই-একটা মিছিল আর একদিনের হরতাল দিয়ে শহীদের তাজা রক্তের শোধ নেওয়া যায় কি?

৩.কেবল ঝটিকা মিছিল নির্ভর আনুগত্য বাস্তবতার বিচারে সকলের কাছে আশা করা ঠিক নয় (যেমন: প্রশাসনিক কর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার..)।

(চ) নিজেদের পরিবারের ও দলের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করা:

১.পরিবারের প্রতি যথাযথ প্রভাব থাকা উচিত। পরিবার ইসলামিক স্বভাব ও রুচিসম্পন্ন হওয়া চাই। সকল সক্রিয় জনশক্তির পুরো পরিবার ইসলামী চরিত্রের হলে এর প্রভাব বিশাল।

২.এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে বাইরের শক্তি নিজেদের লোককে ব্যবহার করে গ্রুপিং সৃষ্টি করার সুযোগ পায়।

৩.অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ দমনে দৃষ্টিভঙ্গির ভ্রান্তি, নেতাদের আদর্শচ্যুতি ও আদর্শচ্যুতদের নেতৃত্ব বর্জনীয়।

(ছ) সামাজিক মূল্যায়নের বাস্তবতা উপলব্ধি:

১.প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বাদ দিয়ে কেবল কামিলে পড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কিংবা অখ্যাত কলেজে পড়া ছাত্র থেকে নেতৃত্ব আসতে থাকলে ভবিষ্যত অতোটা উজ্জ্বলতর হবে কি?

(জ) আঞ্চলিকতা ও জাতীয়তাবাদের রোগ পরিহার:

১.কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় সংগঠন মানেই যেনো অমুক বিশেষ জেলাসমূহ না বুঝায়- তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(ঝ) পর্দাগত দুর্বলতা দূর করা:

১.মোবাইল বা ল্যাপটপে যাচ্ছেতাই নাটক, সিনেমা প্রভৃতি কপি করে রাখা ঠিক নয়। সকল নাটক, সিনেমা ইত্যাদি বৈধ বা মুবাহ নয়। যাচ্ছেতাই গান শোনা, নাটক দেখা ও আগ্রহ সহকারে নারী প্রসঙ্গ নিয়ে (এবং নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষ প্রসঙ্গ নিয়ে) অশালীন কথা বলার অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে।

২.টিউশনীর ক্ষেত্রে পুরুষ শিক্ষক দ্বারা মেয়েদেরকে পড়ানো যাবে না। বিশেষ করে- একজন ছাত্রীকে পড়ানো আরও জঘন্য। ছাত্রী পড়াতে বিবাহিত পুরুষদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপরটিও ঠিক নয় কারণ বিয়ে করলেও পর্দার বিধান সমভাবে কার্যকর থাকে।

(ঞ) কেন্দ্র-নিয়ন্ত্রিত ও স্বায়ত্তশাসিত উভয়ের সুবিধাগুলো গ্রহণ:

১.কিছু মৌলিক বিষয়ে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।

২.অন্য বিষয়ে শাখাগুলো যেনো পরিস্থিতির আলোকে সৃষ্টিশীলতা ও স্বাধীনতা প্রয়োগ করে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারে তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

(ট) ব্যাপক সামাজিক ও সেবামূলক কাজ:

১.সেবামূলক, চিকিৎসামূলক, শিক্ষামূলক ও সামাজিকসহ বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা আবশ্যক। (অ)গর্ভবতী নারীর সেবা, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর কানে আযান-ইকামাত ও আকীকা, বিয়েতে সহযোগিতা, লাশ গোসল দেওয়া ও দাফনকাজে সহযোগিতা ইত্যাদি কাজে সহায়তা, অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বদান করা (আ)অধিকাংশ বাড়িতে ফলদার ও ভেষজ বৃক্ষ রোপণ করিয়ে তার সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা (ই)ইয়াতীমকে সহযোগিতা, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের সহযোগিতা, আলিম ও ইমামদেরকে (লেখকের নামে-বেনামে কিতাবাদী উপহার, টিউশনী, কোচিং, বয়স্কশিক্ষা ইত্যাদির আয়োজন করা

(ঠ) জনশক্তিকে যোগ্য বানানো ও যোগ্যদের জনশক্তি বানানো:

১.একটি সফল আন্দোলনের জন্য যে ধরনের যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্বের সমন্বয় প্রয়োজন তারা হলেন: (অ)পিএইচডি/ডক্টরেট ধারী (আ)আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর দক্ষ ‘একাডেমিশিয়ান’ (ই)আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত ইসলামিক স্কলার বা আলিম (ঈ)নামকরা লেখক ও সুবক্তা (উ)ইসলামি অর্থনীতির উপর ভাল দখল আছে এমন কেউ (ঊ)সরকারী প্রশাসন চালিয়েছে এমন কোনো আমলা (ঋ)ইসলামী আন্দোলনের উপর বড় মাপের কোনো গবেষক (এ)সামাজিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন কেউ (ঐ)জনপ্রিয় শিল্পী, অভিনেতা ও খেলোয়াড় (ও)আত্মসমালোচনামূলক প্রশ্ন হলো, এর ধরনের লোকেরা আমাদের আন্দোলনে শতকরা কতো ভাগ আছেন?

২.বাংলাদেশে কি যোগ্যতা সম্পন্ন লোকেরা ইসলামকে ভালবাসে না? এ প্রশ্নের আগে আরেকটি প্রশ্নও উঠতে পারে যে, নেতৃত্বে থাকা লোকেরা কি এটা চান যে- যোগ্যতাসম্পন্নরা নেতৃত্বে আসুক?

(ড) আন্দোলনকারী ছাত্র ও নিজ সন্তানকে এক দৃষ্টিতে দেখা:

১.সন্তানদের যদি বলা হয়, আগে ক্যারিয়ার গড়ো পরে সংগঠনের সেবা করতে পারবে- তাহলে, ছাত্র আন্দোলনকারীদেরকেও একই কথা বলা উচিত।

২.আর যদি, সন্তানতুল্য ছাত্র আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে অধিক ত্যাগ আশা করা হয় তাহলে একই ত্যাগ নিজ সন্তানের কাছ থেকেও আশা করা উচিত।

(ঢ) প্রকৃত ছাত্রদের নেতা বানানো এবং ‘অর্নামেন্টাল ছাত্রদের’ বৃহত্তর আন্দোলনে পাঠানো:

১.মাস্টার্স (বা ঐ মান) শেষ করার পরেই দায়িত্বশীলদেরকে বিদায় দিতে হবে অথবা (অ)তখন তাদেরকে ‘পার্ট টাইম’ চাকরি বা কোনো ব্যবসা করতে দিতে হবে অথবা (আ)মাসিক হরে দলীয় ফান্ড থেকে তাদরেকে বেতন/সম্মানী দিতে হবে।

২.কেবল ‘অর্নামেন্টাল ছাত্রজীবন’ ধরিয়ে রাখা সম্মানজনক নয়।

৩.ছাত্রজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে জনশক্তিকে বিশেষভাবে তত্ত্বাবধান করা প্রয়োজন। (অ)কারণ এ সময়ের নিষ্ক্রিয়তাকে পরে সক্রিয়তায় পরিণত করা কঠিন।

(ণ) দায়িত্ব অর্পিত হলে যোগ্য দায়িত্বশীল হওয়া ও সকল পর্যায়ে যোগ্য দায়িত্বশীল তৈরি করা:

১.নিজের ক্ষতি করে হলেও জনশক্তির হিফাজাত করা প্রয়োজন।

২.জনশক্তির মূল্যায়ন নির্ভর করা উচিত (ক)ইসলামী নৈতিকতা ও (খ)বৈষয়িক যোগ্যতার ভিত্তিতে।

৩.জনশক্তি বেশি বিদায় নেওয়ায় ফলে যেনো অদক্ষদের নেতৃত্বে উঠে আসা অপরিহার্য হয়ে না ওঠে- সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

৪.ব্যক্তিগত পছন্দের কারণে দায়িত্ব দেওয়ার মতো নফসের পূজা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। (অ)নিম্নোক্ত কারণে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া যাবে না: আত্মীয় হওয়ার কারণে, নিজ এলাকার লোক হওয়ার কারণে, নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার কারণে (আ)তাকওয়া, যোগ্যতা ইত্যাদি কম থাকা সত্ত্বেও নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে একক সিদ্ধান্তে দায়িত্বশীল বানানোর বা রাখার চেষ্টা করা যাবে না। (ই)পছন্দের ব্যক্তিকে জোরপূর্বক নেতায় পরিণত করার চেষ্টা ধ্বংসাত্মক ও বর্জনীয়। (ঈ)মতবিরোধ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বড় বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে দূরে রাখার যুক্তি নেই। আর উর্ধ্বতন সংগঠনে তাদের ব্যাপারে বিষোদগার করা আরও জঘন্য কাজ।

৫.ঝুঁকি গ্রহণে ও কর্মব্যস্ত থাকায় অনুসারীর চেয়ে এগিয়ে থাকতে হবে।

৬.দায়িত্বশীলের মধ্যে কথার অমিল, কাজের অমিল, পর্দা সমস্যা, মোবাইলে প্রেম ইত্যাদি থাকা যাবে না। এমনকি কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ বিয়ে করাটাও অশোভন। পরনারীর সাথে ঘোরাফেরার পর বিয়ে করে পরে নামেমাত্র দায়িত্বশীলকে অবহিত করাটা নিজের ও দায়িত্বের ভাবমর্যাদা নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

৭.জনশক্তি দায়িত্বশীলের দুর্বলতাগুলো জেনে গেলে তারা দায়িত্বশীলের স্বভাবের কারণে নিজেরা খারাপ হওয়ার লাইসেন্স নিয়ে থাকে। অবশ্য, ইসলাম কাউকে খারাপ হওয়ার লাইসেন্স দেয় না। কিন্তু দায়িত্বশীলের দুর্বলতাগুলো জনশক্তির আনুগত্য কমিয়ে দিয়ে থাকে।

৮.ব্যক্তিবিশেষের সাথে ভিন্নমত পোষণকারীকে আদর্শের শত্রু ভাবা যাবে না। (অ)কাফিরের উপরেও মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার বৈধতা নেই। (আ)নিজ বিশ্বাসের বা দলের ভিন্ন চিন্তার অধিকারীর মোকাবেলায় তার নামে মিথ্যে অপবাদ দেওয়া তো আরও জঘন্য।

৯.দল বা দেশকে পৈত্রিক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করা যাবে না।

১০.ভাতৃসুলভ আচরণ করতে হবে। (অ)প্রচলিত ‘পীরসুলভ’ বা মনিবরূপী আচরণ করা যাবে না।

১১.নিজের চেয়েও যোগ্যতর নেতৃত্ব গঠন করে তাকে এগিয়ে নিয়ে আনা প্রয়োজন।

১২.অধীনস্তদের প্রতিভা বিকাশ করে তাদেরকে সাফল্য লাভের পথনির্দেশ প্রদান করা আবশ্যক।

১৩.পরকালে নেতা ও পদের অধিকারীদের হিসেব কঠিন হবে- এ অনুভূতি বজায় রেখে সর্বদা ও সর্বস্থানে নিরহংকার হতে হবে।

(ত) ভোট ও পরামর্শ পদ্ধতিকে উন্নততর করা:

১.ইসলামবিরোধী না হলে সাধারণত অধিকাংশের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। (অ)বর্তমান সকল সদস্যদের চিন্তার বিপরীতে সাবেক কিছু নেতার মতের হুবহু বাস্তবায়ন করা ঠিক নয়। (আ)পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সফলতা হোক বা ব্যর্থতা হোক কোনোটিই ব্যক্তিবিশেষের হবে না বরং তা হবে সকলের। কৃতিত্ব নেতার আর ব্যর্থতা জনশক্তির নয়।

২.দলের মধ্যে শিক্ষক, ছাত্র, পুরুষ, নারী, আলিম, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, কৃষিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, বুদ্ধিজীবী, কৃষক ও শ্রমিকসহ সকলকে অংশগ্রহণ করানো প্রয়োজন। প্রতিটি বিভাগ বা সেক্টর থেকে অন্তত একজন যেনো পরামর্শ কমিটিতে থাকতে পারে যে ব্যবস্থা করা দরকার।

৩.ভোট গ্রহণ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা প্রয়োজন: (অ) কম যোগ্য লোক বেশি ভোট পাওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তনযোগ্য। (আ) ব্যক্তিবিশেষের মনোনয়নই সকলের ভোট পাওয়ার কারণ বলে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। এর সমাধানে- সেক্রেটারী মনোনয়ন না করে সরাসরি নির্বাচিত করা যেতে পারে। (ই) ধরা যাক, কম যোগ্য ৫০০ লোকের নেতা প্রায় ৫০০ ভোট পেলেও অধিক যোগ্য ৫০ লোকের নেতা হয়তো ১০০ ভোটও পায় না। ফলে কম যোগ্য হলেও অধিক লোকের ভোট পাওয়ায় সে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। ফলে নেতৃত্ব বাছাইয়ে যোগ্যতা আর মাপকাঠি থাকে না বরং সংখ্যাই যেনো মাপকাঠি হয়ে ওঠে। (ঈ) ধরা যাক, একজন ভাইকে অনুসারীরা চাচ্ছেন কিন্তু নেতার পছন্দ না হওয়ায় যোগ্যতা সম্পন্ন ঐ লোককে বিদায় দেওয়া হলো। তাহলে এটা কি যুক্তিসঙ্গত হলো?

(থ) গণমুখী সংগঠন প্রতিষ্ঠা:

১.সবাই সর্বোচ্চ শপথ নেবে এ আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। (অ)আন্দোলনের প্রতি মানুষের ভালবাসার মাত্রা অনুযায়ী তাদেরকে মূল্যায়ন করা উচিত।

২.সর্বোচ্চ পর্যায়ে সক্রিয় না হলে কাউকে ভালোবাসা যাবে না- এমন কোনো কথা নেই। (অ)সদাচরণে শত্রুরা প্রায়ই বন্ধুতে পরিণত হয়। (আ)যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়ন না হলে প্রতিপক্ষ অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পেয়ে যায়।

৩.ফেসবুকসহ সকল মিডিয়াকে আদর্শের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

(দ) আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সকল বিকৃতি রোধ করা:

১.বিকৃতি রোধে সতর্ক করার কেউ থাকলে তাকে সাধুবাদ জানানো উচিত।

২.সামনে সংশোধনকারী ও আড়ালে প্রশংসাকারী হওয়া দরকার।

৩.চাটুকার ও সুযোগ-সন্ধানীদেরকে বর্জন করতে ও এড়িয়ে চলতে হবে।

৪.ইহতিসাবকারীকে গুরুত্ব প্রদান করা আবশ্যক। (অ)পারস্পরিক যোগাযোগ বহাল থাকতে হবে। (আ)কর্মসূচী ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঠিকমতো ‘সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা’ বা ‘ইহতিসাব’ হওয়া চাই। (ই)অপাত্রে সমালোচনা না করে আত্মসংশোধনের প্রচেষ্টা বাড়ানো প্রয়োজন। (ঈ)‘আড্ডা মানেই সমালোচনা’ এ অবস্থা যেনো সৃষ্টি না হয়।

৫.নেতাদের অবস্থা, প্রশাসনিক নির্যাতন, খারাপ রেজাল্ট ইত্যাদি বা অন্য কারণে হতাশ হওয়া যাবে না।

৬.পারস্পরিক শুভাকাঙ্ক্ষার প্রতিকূলে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকা উচিত নয়।

৭.রাষ্ট্রীয়, দলীয় বা জনগণের সম্পদ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা বা করতে দেওয়া যাবে না।

৮.জ্ঞান, গুণ, দক্ষতা, প্রজ্ঞা দিয়ে আনুগত্য লাভ করা প্রয়োজন। জোর করা ক্ষতিকর। (অ)ভালোবাসার সাথে প্রস্তাবের দুর্বলতা খণ্ডন করে আনুগত্য অর্জন করতে হয়; জোর করে নয়। (আ)উত্তম প্রস্তাব না দিয়ে একের পর এক সকল প্রস্তাব নাকচ করা উচিত নয়। নিজস্ব সিদ্ধান্ত মানানোর জন্য কেবল আনুগত্যের আয়াত ও হাদীসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা ত্রুটিপূর্ণ নিয়তের অংশ। (ই)অন্ধ আনুগত্যের প্রেরণা থেকে নয় বরং যুক্তি, বুদ্ধি, তথ্য, ইতিহাস, পরিসংখ্যান ইত্যাদিকে ভিত্তি করে সংগঠন ও কর্মপদ্ধতি দাঁড় করানো প্রয়োজন।

৯.ব্যক্তিগত ও দলীয় রিপোর্ট তৈরিতে বাড়িয়ে লেখার প্রবণতা বর্জন করতে হবে। (অ)কেবল দেখানোর জন্য (বা রিপোর্টে লেখার জন্য) কুরআন পড়া যাবে না। (আ)পূর্বের দায়িত্বশীলের চেয়ে অধিক পারদর্শিতা দেখানোর লক্ষ্যে অতিরঞ্জিত, মিথ্যা ও অবাস্তব রিপোর্ট তৈরি করা গোপন শিরক (তথা রিয়া)। (ই)ব্যক্তিগত ও দলীয় পর্যায়ে আত্মপ্রচার ও প্রদর্শনেচ্ছাকে বর্জন করতে হবে। যেমন: ফেসবুকে নিজেকে তুলে ধরার প্রবণতা বর্জনীয়।

১০.সকল পর্যায়ে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। (অ)পারতপক্ষে নিজের উপার্জন বা নিজের অর্থ দিয়ে উপহার দেওয়া উচিত। উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি হিসেবে নিজেরা নিজেদের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান করা অনৈতিক।

১১.রাষ্ট্রীয় বা দলীয় কোষাগার থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করা অনুচিত। (অ)দলের মোটর সাইকেল বা এ জাতীয় সম্পদ ঈদে বা অন্য সময় নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া বা আত্মীয়-স্বজনকে সেগুলো ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। কারণ এ কাজগুলো এক পর্যায়ের খিয়ানাত।

১২.মানুষের কষ্টের অর্থ দিয়ে নিজেরা বিলাসিতা করা অন্যায়। (অ)অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রকৃত হিসেব দেওয়া ও নেওয়ার অভ্যাস থাকা অপরিহার্য।

১৩.যুক্তিসঙ্গত প্রয়োজনকে বিলাসীতায় পরিণত করা যাবে না। (অ)জনশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বা জনপ্রিয় হওয়ার জন্য অতিরিক্ত ভ্রমণ, উপহার দেওয়া বা অন্যভাবে অর্থের অপচয় করা যাবে না। (আ)ঠিকমতো খেতে পায় না এমন জনশক্তির এলাকায় দলীয় অর্থ দিয়ে নেতাদের উচ্চমানের আপ্যায়নের আয়োজন না করাই উচিত।

১৪.ক্যারিয়ারের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি বর্জন করা প্রয়োজন। (অ)দ্বীনের কাজে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে পার্থিব ক্যারিয়ার ধ্বংস করা (বা ক্যারিয়ার গঠনে মাত্রাতিরিক্ত উদাসীন হওয়া) কৌশলের কাজ নয়। (আ)ক্যারিয়ারকে লক্ষ্য বানিয়ে দ্বীনের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো (বা ক্যারিয়ার গঠনে মাত্রাতিরিক্ত সচেতনতা) নির্বোধের কাজ; তথা স্বল্পমেয়াদী জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া। (ই)‘যেখানে কাজ কম, সুবিধা বেশি সেখানে কাজে আগ্রহ কিন্তু সেখানে কাজ বেশি, সুবিধা কম সেখানে আগ্রহ নেই’ এমন অবস্থা কাম্য নয়। (ঈ)জীবনমান স্বাভাবিক না রেখে উচ্চমানের করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া ঠিক নয়। (উ)অতিরিক্ত টিউশনী করানো ঠিক নয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post