গত পরশুদিন একটা বই পড়তেছিলাম।সেখানে পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার নিয়ে বেশ
কয়েকটি উপদেশ পেলাম। উপদেশগুলো আমার খুব ভাল লেগেছে।এগুলো বাস্তব জীবনে ফলো করা
জরুরী বলে আমার মনে হয়েছে। আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে মনে করে আপনাদের সাথে
শেয়ার করলাম।
বিবাহিত অবিবাহিত সবারই কাজে লাগবে ইনশাল্লাহ।তবে,যারা বিবাহিত তাদের পরিবারে
শান্তি রক্ষার্থে এর মধ্যকার কিছু উপদেশ বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরী।
তাহলে,আসুন!আমরা সে উপদেশ গুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নিই।
১. পিতামাতার সাথে শিষ্টাচারিতা অবলম্বন কর। তাদেরকে উফ পর্যন্ত বলো না।
তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল।
২. আল্লাহর অবাধ্যতামুলক নির্দেশ না হলে সর্বদা তাদের অনুগত থাক। আল্লাহ
তায়ালার অবাধ্য হয়ে অন্য কারও আনুগত্য করবে না।
৩. পিতামাতার সাথে নম্র-ভদ্র ব্যবহার করবে। তাদের সামনে বিরক্তি প্রকাশ করবে
না। তাদের দিকে ক্রোধের নজরে তাকাবে না।
৪. পিতামাতার মান সম্মানের দিকে খেয়াল রাখবে। তাদের সম্পদ অনুমতি ব্যতিত নেবে
না।
৫. তাদের অনুমতি ছাড়া হলেও তারা খুশি হয় এমন কাজ করবে।
৬. তোমাদের নিজস্ব কাজসমুহে তাদের পরামর্শ নেবে। তাদের মতের বিরোধী কোন কাজ
করতে বাধ্য হলে তাদের কাছে ওজর পেশ করবে।
৭. তাদের আহবানে উৎফুল্ল মনে সাড়া দেবে। যেমন:- জি আব্বা কিংবা জি আম্মা
ইত্যাদি।
৮. তাদের বন্ধুবান্ধব ও নিকটাত্মীয়দের সাথে তাদের জীবদ্ধশায় ও মৃত্যুর পরে ভালো
ব্যবহার করবে।
৯. তাদের সাথে ঝগড়া করবে না এবং তাদেরকে কখনও দোষারোপ করবে না। তাদের ভুল হলে
সম্মান ও ভদ্রতার সাথে বুঝিয়ে দেবে।
১০. তাদের সামনে উচ্চস্বরে কথা বলবে না। তাদের সাথে কথা বলার সময় আদবের সাথে
কথাবার্তা বলবে এবং তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
১১. পিতামাতা তোমার সামনে আসলে দাঁড়িয়ে যাও এবং তাদের মাথায় চুমু খাও।
১২. বাড়ীতে মাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করবে। পিতার কাজেও সহযোগিতা করতে দেরী
করো না।
১৩. গুরুত্বপূর্ণ কাজে হলেও তাদের অনুমতি না নিয়ে সফর করবে না। যদি বাধ্য হয়ে
সফর করতেই হয় তাহলে, তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
১৪. তাদের ঘরে বিশেষ করে ঘুমানোর সময় অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করবে না।
১৫. যদি ধুমপানের মত বদভ্যাস থাকে তাহলে তাদের সামনে ধুমপান করবে না।
১৬. তাদের আগে খাওয়া দাওয়া করবে না। খাওয়া দাওয়া করার ব্যাপারেও তাদের সাথে
সম্মানজনক ব্যবহার করবে।
১৭. তাদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে না। যদি তোমার অপছন্দ কোন কাজ তারা
করেও ফেলে তবুও তাদেরকে তিরস্কার করবে না।
১৮. তাদের উপর কখনও নিজের স্ত্রী কিংবা সন্তান-সন্ততিকে প্রাধান্য দেবে না।
সব কিছুর আগেই তাদের সন্তুষ্টি কামনা করবে। কেননা, তাদের সন্তুষ্টিতেই
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি এবং তাদের অসন্তুষ্টিতে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার
অসন্তোষ।
১৯. তাদের থেকে উচ্চ স্থানে বসবে না এবং তাদের সামনে অহংকারভরে পা ছড়িয়ে
দেবে না।
২০. নিজের পিতার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে অহংকার করো না। তাদের পরিচিতিকে
অগ্রাহ্য করো না। তাদেরকে একটা কথা দ্বারা হলেও কষ্ট দিও না।
২১. তোমার পিতামাতার জন্য খরচ করতে কখনো কৃপণতা করবে না। খেয়াল করবে তারা
যেন তোমার উপর কোন অভিযোগ করতে না পারে। তুমি যদি এমন কর তোমার সন্তানও
এমনি করবে। কথায় আছে যেমন কর্ম তেমন ফল।
২২. পিতামাতার সাথে বেশী বেশী সাক্ষাৎ করবে, তাদেরকে উপহার দেবে এবং তোমার
লালনপালনের কারণে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। তোমার সন্তানের প্রতি তোমার
অক্লান্ত পরিশ্রম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
২৩. সম্মান পাওয়ার সবচেয়ে বেশী অধিকারী জন্মদাত্রী মা তারপর পিতা। জেনে
রাখ, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।
২৪. পিতামাতার অবাধ্য হওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। কেননা, তাদের অবাধ্য হলে
দুনিয়া ও আখিরাতে হতভাগ্য হবে। জেনে রাখ,তোমার পিতামাতার সাথে যেমন আচরণ
করবে তোমার সন্তানও তোমার সাথে তেমন ব্যবহার করবে।
২৫. তোমার পিতামাতার কাছে কোন কিছু চাইতে হলে বিনয় ও নম্রতার সাথে চাও।
তারপর সেটা দিলে কৃতজ্ঞ হও এবং না দিলে ওজর পেশ কর। বারবার চেয়ে তাদেরকে
ডিস্টার্ব করো না।
২৬. উপার্জনক্ষম হলে উপার্জন কর এবং পিতামাতাকে যথাসম্ভব সহায়তা কর।
২৭. তোমার উপর পিতামাতা ও স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে তাদের
অধিকার আদায় করে দাও। যদি উভয়ের মধ্যে সংকট সৃষ্টি হয় তাহলে, তাদের মাঝে
বিরোধ দমনে চেষ্টা কর এবং উভয়কেই গোপণে গিফট দিয়ে দাও।
২৮. যখন তোমার পিতামাতার সাথে স্ত্রীর ঝগড়া হয় তখন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে
পরিস্থিতি মোকাবেলা কর। স্ত্রীকে বুঝিয়ে দাও যে,যদি সে সঠিক পথের উপর থাকে
তাহলে তুমি তার সাথেই আছো। তবে, পিতামাতাকে সন্তুষ্ট করতে তুমি বাধ্য
হচ্ছো।
২৯. যখন পিতামাতার সাথে বিবাহ ও তালাক নিয়ে মতবিরোধ হবে তখন ইসলামী শরীয়তকে
নিজেদের মধ্যকার ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ করে নেবে। তা তোমাদের শ্রেষ্ঠ
সাহায্যকারীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হবে।
৩০. তোমার উপর পিতামাতার নেক ও বদদুয়া অবশ্য কবুল হওয়ার যোগ্য। অতএব, তাদের
বদদুয়া থেকে সতর্ক হও।
৩১. মানুষের সাথে শিষ্টাচারিতা তথা আদব অবলম্বন কর। যে মানুষকে গালি দেয়
মানুষও তাকে গালি দেয়। রাসুল (সাঃ) বলেন:
مِنْ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ قَالُوا يَا رَسُولَ
اللَّهِ وَهَلْ يَشْتِمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ نَعَمْ يَسُبُّ أَبَا
الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّهُ
অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি কর্তৃক পিতামাতাকে গালিদান করা কবীরা গুণাহের
অন্তর্ভুক্ত। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! কেউ কি নিজ
পিতামাতাকে গালি দেয়? রাসুল (সাঃ) জবাবে বললেন: হ্যাঁ দেয়। সে অন্য লোকের
পিতাকে গালি দিলে সেও তার পিতাকে গালি দেয় এবং অন্য লোকের মাতাকে গালি দিলে
সেও তার মাতাকে গালি দেয়।(এটাই প্রকারান্তরে নিজ পিতামাতাকে গালি দেয়া)
(মুসলিম শরীফ, বায়হাকী শরীফ)
৩২. জীবিত ও মৃতাবস্থায় পিতামাতার সাথে সাক্ষাৎ কর। তাদের পক্ষ থেকে সাদকাহ
দাও এবং তাদের জন্য বেশী বেশী দুয়া কর নিম্নোক্ত ভাষায়-
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِناً
وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا
تَبَاراً
অর্থাৎ, হে আমার রব,আমাকে,আমার পিতা-মাতাকে,যারা মু"মিন হিসেবে আমার ঘরে
প্রবেশ করেছে তাদেরকে এবং সব মু"মিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করে দাও।(সুরা নূহ:
২৮)
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيراً
অর্থাৎ,হে আমার রব!তুমি তাদের উভয়ের প্রতি অনুগ্রহ কর যেমন তারা ছোটবেলায়
আমাদেরকে লালন পালন করেছেন।(সুরা বানী ইসরাঈল:২৪)
(একটি আরবী বই থেকে অনুবাদ করে শেয়ার হল)
Tags:
ইসলামিক কথা